এলাকাবাসী জানায়, ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর শক্তিশালী জলোচ্ছ্বাস সিডরের আঘাতে বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় কয়রা উপজেলা। এর দুই বছর পর ২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলায় আবারও ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ে উপজেলাটি। গত বছরের ১০ মে ঘূর্ণিঝড় ফণি ও ১০ নভেম্বর বুলবুলের আঘাতে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় ফের বিধ্বস্ত হয় এ জনপদ।
সবশেষ চলতি বছরের ২০ মে সুপার সাইক্লোন আম্পানে ৪ ঘণ্টাব্যাপী তাণ্ডব উপকূলীয় জনপদ বাঁধ, ঘরবাড়িসহ সব তছনছ করে দিয়ে যায়। এতে উপজেলার ২১টি স্থানে বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। প্রথমদিকে বেড়িবাঁধের ৯টি স্থান ভেঙে কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীর পানি লোকালয়ে প্রবেশ করে। পরে বেড়িবাঁধের আরও ৫টি স্থান ভেঙে গিয়ে লবণ পানিতে প্লাবিত হয় ৪২টি গ্রাম। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হয় ৫১ হাজার ঘরবাড়ি। এমন পরিস্থিতিতে গত ২০ আগস্ট জোয়ারের পানিতে আবারও বাঁধ ভেঙে কয়রায় নতুন করে চারটি গ্রাম প্লাবিত হলে দুর্ভোগে পড়ে অন্তত ১০ হাজার মানুষ। কপোতাক্ষ আর কয়রা নদীর পানি বেড়ে গিয়ে প্লাবিত হয়েছে ২ নম্বর ও ৩ নম্বর কয়রা, গোবরা, ও বেদকাশি গ্রাম।
উপকূলীয় এলাকার টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে ৮ হাজার কোটি টাকার ৪টি প্রকল্প নেয়ার কথা জানিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, চলতি অর্থবছর থেকে এসব প্রকল্পের কাজ শুরুর ঘোষণা দেয়া হয়েছে। খুলনা এবং সাতক্ষীরায় দুটি করে চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে।
গোবরা গ্রামের মফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরা জোয়ারে ডুবি আর ভাটায় ভাসি। বছরের অধিকাংশ সময় সামান্য ঝড়-বৃষ্টি হলেই এ অবস্থায় পড়তে হয়।
কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘আইলা থেকে আম্পান ১১ বছর। এখন পর্যন্ত এ এলাকায় প্রাপ্তির খাতা শূন্য। এ অবহেলা মেনে নেয়ার মতো না। এরইমধ্যে স্বেচ্ছাশ্রমে কয়রার স্থানীয় মানুষরা যে রিং বাঁধগুলো দিয়েছে তার ওপর একটি ঝুড়ি মাটিও ফেলতে পারেনি পাউবো। ক্ষতিগ্রস্থ অনেক স্থান এখনও ভাঙা রয়েছে।’
দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জি এম কবি শামছুর রহমান বলেন, ‘আমার ইউনিয়নে পাউবোর ২৭ কিলোমিটারসহ উপজেলার সিংহভাগ বেড়িবাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। জাইকা ও বিশ্বব্যাংকের লোকজন ঝুঁকিপূর্ণ এসব বাঁধ কয়েকবার পরিদর্শন করেছেন। জাতীয়, আঞ্চলিক ও স্থানীয় পর্যায়ে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের ব্যাপারে অনেকবার সভা ও সেমিনার হয়েছে। তবে, কবে নাগাদ পাউবো টেকসই বাঁধ নির্মিত হবে তার কোনো হদিস নেই।’
কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ভাঙন কবলিত এলাকা হওয়া সত্ত্বেও এতো বছরে কোনো টেকসই বেড়িবাঁধ হয়নি।’
এ ব্যাপারে পাউবোর ১৪/১ পোল্ডারের শাখা কর্মকর্তা মো. মশিউল আবেদীন বলেন, ‘সরকার সুন্দরবন উপকূলীয় কয়রায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে।’
তবে কবে নাগাদ এ কাজ শুরু হবে সে ব্যাপারে কিছু বলতে পারেননি তিনি।
পাউবো সাতক্ষীরা নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু সরকার বলেন, কয়রার ১৪/১ এবং ১৪/২ পোল্ডারের দুটি প্রকল্প পানি উন্নয়ন বোর্ডে জমা দেয়া হয়েছে। গত জুলাই মাসে ১৪/১ পোল্ডারের প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে চলে গেছে। এখন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) সভায় পাস হলেই কেবল কাজ শুরুর বিষয়ে বলা যাবে।